Month: May 2015

হৃদয়ভাঙা কাঁচবৃষ্টি শেষে (হাসান ইমতি)

বালুচরী ঘাগরা পরা পাহাড়ি মেয়েদের মরাল গ্রীবা
ছুঁয়ে পৃথিবীর বুকে তখনো সন্ধ্যা নামেনি আলোর
অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার উদযাপনে আয়োজকের ভূমিকায়…

আকাশের নীল চোখে চোখ রেখে সগর্বে দাড়িয়ে থাকা
দেবদারু গাছের পাতারা তখনো সাঁঝের আঁধারের
প্ররোচনায় বিসর্জন দেয়নি তাদের সবুজ সতীত্ব …

উদরপূর্তির খাদ্য ও প্রজননের জৈবিক তাড়নায় বেঁচে
থাকা খেচরেরাও আলোকিত দিনের সঞ্চয় শেষে আঁধারের
আহ্বানে তখনো তাদের নীড়ের উষ্ণতার আলিঙ্গনে ফেরেনি …

সমস্ত অতীত পিছুটান নিঃশেষে মুছে দিয়ে আয়েশকে সুখ
ভেবে স্বার্থপর ভাবনায় হৃদয় ভাগ করে তোমার নির্বিকার চলে
যাওয়ার শূন্যতায় নিমগ্ন আমার একান্ত চেতনার এই বিকেল
তবুও কেবলই বরফ যুগের মৃত স্মৃতির শ্বেত বিগলিত প্রস্রবণ …

হৃদয়ভাঙা কাঁচবৃষ্টি শেষে করাল মৃত্যুর মত এমনই এক
পরিত্যক্ত পাথর বিকেলের বিষণ্ণ ছায়াপথ মাড়িয়ে
চঞ্চল মৃগয়া শরীরের উপহার নিয়ে বহুজন্ম পরে
তুমি আবার ফিরে এলে আমার শীতলতার বাহুডোরে…

যে ঠিকানা একদিন আমাদের একান্ত নিজস্ব ছিল,
যে ঠিকানা একদিন আমাদের সুখের ঠিকানা ছিল,
যে ঠিকানা কেবল আমাদেরই থাকার কথা ছিল,
হৃদয় ভাগ করে নিয়ে তুমি সব এলোমেলো করে সে
ঠিকানা পেছনে ফেলে একদিন তুমি চলে গিয়েছিলে
আজ কর্পূর সুখের ডানা ভেঙে বড় বেশী অসময়ে,
বড় বেশী দেরী করে, বড় বেশী অনাহুতের মত
পরাজিত হৃদয় নিয়ে অন্তিম আশ্রয়ের খোঁজে তুমি
ফিরে এলে আমার অসহায় একাকীত্বের কাছে,
এখানে আজও তোমার ফেলে যাওয়া মৃত সংসার আগলে
রেখে বেদনাসিক্ত স্মৃতির সাথে আমার একান্ত বসবাস,
এখানে শারীরিক বেঁচে থেকেও তুমি এক মৃত ভাবনার নাম,
এখানে মৃত পেন্ডুলামে সময় থেমে আছে বহু জন্ম ধরে,
এখানে আজ বরাহুত সুখের প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ,
এখানে আজ আর কোন স্বপ্নের রসদ বেচে পড়ে নেই ।

আমি এভাবেই তাকাই (হাসান ইমতি)

আমি পুরুষ, আমি এভাবেই তাকাই,
যেভাবে পুরুষ তার প্রিয় নারীর দিকে তাকায়,
যেভাবে পুরুষ তার নারীর চোখে চোখ রাখে,
যেভাবে একজন পুরুষ শুধু চোখের ভেতর
দিয়েই একজন নারীর হৃদয়রাজ্য জিতে নেয়,
এ লালসা নয়, শুধুমাত্র কাম নয়, এ অনন্ত পৌরুষ,
একজন পুরুষ তোমার দিকে তাকিয়েছে নারী,
একজন পুরুষ তোমার চোখের গভীরে চোখ রেখেছে,
একজন পুরুষ চোখ দিয়ে তোমার হৃদয় ছুঁয়েছে,
তোমার যদি নতুন পথে চলতে নিষেধের বারণ থাকে,
কোন পূর্ব প্রতিজ্ঞার শেকলে বাধা থাকে নিয়তির সীমানা,
যদি তুমি অনন্ত অসীমে অকারণ অবিশ্বাস রেখে থাকো
যদি পুরুষের ভালোবাসাকে কেবল বহু যত্নে সাজানো
বাগানের মত পরিপাটি সুন্দরের উৎস বলে ভেবে থাকো,
যদি কামাতুর প্রেমিক চোখের দংশন সইতে না পারো
তবে তোমার নাজুক ও চোখ তুমি ফিরিয়ে নিও নারী,
জেনে রেখো এই অদম্য পৌরুষ তোমার জন্য নয়,
আমি পুরুষ, আমার প্রেমময় চোখের তারায় নারীর
জন্য আছে সুপ্ত আগ্নেয়গিরির দুর্নিবার লেলিহান ।

আমি পুরুষ, আমি এভাবেই তাকাই,
যেভাবে একজন পুরুষ তার নারীর দিকে তাকায়,
যেভাবে সাজানো সভ্যতার কৃত্রিম খোলস ফেলে হৃদয়ের
অকৃত্রিম আহবানে চোখে চোখ মিলে একাকার হয়ে যায়,
যেভাবে চোখে চোখে নির্বাক সব কথা বলা হয়ে যায়,
যেভাবে চোখে চোখে ভালোবাসাবাসির জোয়ার আসে,
সেভাবে একজন পুরুষ তোমার দিকে তাকিয়েছে নারী,
একজন পুরুষ তোমার হৃদয় দুয়ারে কড়া নাড়া দিয়েছে,
যদি তোমার মনে না থাকে উড়াল আকাশের বিশালতা,
যদি দুর্গম যাত্রা শুরুর আগেই তোমার গন্তব্য এসে পড়ে,
যদি বিপুল সাগরের সুনীল গহীনতা মাপার মত দীর্ঘ
কোন গজ-ফিতার সন্ধান তোমার একান্তই জানা না থাকে,
যদি তুমি সাদা চোখ মেলে দেখা দিগন্তকেই শেষ
পরিণতির সীমানা বলে মেনে নিতে শিখে গিয়ে থাকো,
তবে তুমি তোমার হৃদয় দুয়ার বন্ধ করে রেখ নারী,
জেনো এই অনন্ত পুরুষের কাঙ্ক্ষিত আরাধ্য ভূমি নয়
তোমার বিষয় ভাবনায় নিমজ্জিত পরিপাটি হৃদয়-পট,
জেনো এ নিঃসীম মৈথুনের আহ্বান তোমার জন্য নয় নারী,
চেনা পথ ধরে তুমি ফিরে যাও তোমার চেনা ঠিকানায়,
তুমি ভালো থেক নারী তোমার একুরিয়াম বন্দি রঙিন মাছের
ঝাঁক এবং পোষা পাশ বালিশের আলিঙ্গনের উত্তাপে,
আর সত্যিই যদি হয়ে থাকো পুরুষ কল্পনার সেই অনন্ত নারী
সত্যিই যদি হয়ে থাকো চিরন্তন প্রেমিকের শাশ্বত প্রেমিকা,
তবে দৃপ্ত সাহসে তোমার চোখে রাখো এই পুরুষের চোখে,
অনন্ত ভরসায় তুমি চোখ রাখো এই প্রেমিকের চোখে,
যেভাবে একজন নারী একজন পুরুষের দিকে তাকায়,
যেভাবে একজন নারী একজন পুরুষের চোখে চোখ রাখে ।

শুভ নহবত

তখন তোমার অনন্ত আকাশ জুড়ে খেলাঘর
মেঘ পোয়াতি রোদ্দুর আর –
ডাহুক পাখিটির ডানার মতো
হাজার নক্ষত্র আঁকা,
সোহাগী চাঁদ যায় বুঝি বুড়ি জলে ভেসে।
মেঠো পথে ধুলোমাখা কিছু রোদ্দুর
আর – অন্ধকারে দ্রবীভূত পেঁচার ডাক।
অতি বৃদ্ধ বটগাছ – তার দীর্ঘ ছায়াপথে
হামাগুড়ি দেওয়া অলস সকাল।
প্রতিপদে আধ-খাওয়া চাঁদ – যেন –
বানভাসি – সোনালী মেঘের স্রোতে –
খেয়ালী শিশুর হাতে ছাড়ানো কিছু –
রুপোর দানা –
ভোরের শেষে – যখন –
আঁচল পেতে ঘুমাতে যায় ক্লান্ত রাত্রিরা সব।

সেদিন তোমার অনন্ত আকাশ জুড়ে ছবিঘর –
আম কুড়াতে ব্যস্ত কিছু দুপুরের অশান্ত রোদ্দুর –
পাতায় পাতায় মত্ত কালবোশেখি – শেষ হলে পর –
সদ্য স্নাত – মিঠেল – হাওয়া –
আনমনা খিড়কি দিয়ে হঠাৎ দেখা –
আর ভোরের অভিসারে ক্লান্ত কিছু শিউলি।

আমিও মিশে যাব।
সেই সব নাদিটিরে ফেলে – যেথা –
হিমেল হাওয়ার স্রোতে – ডিঙি বায় –
একরত্তি পালে তার দুরন্ত নেশা –
ফাগুনে বসন্ত এসে – ভেসে গেছে –
নিয়ে গেছে – নিয়ে গেছে তারে –
জননীর কোল ছেড়ে অনন্ত সাগরে
মিশে যাব – ।
তখনও তোমার শুধু অনন্ত আকাশ জুড়ে দিগভ্রান্ত নেশা।
মরমে পরশ তার –
মৃত্যুঞ্জয়ী শুভ নহবত।

 


 

বারাঙ্গনা

এক পয়সা দাম – আমি কমিয়ে দিলাম
এখন আরও সস্তা দরে
বিকাই আমি – সবার তরে ।।

বিকাই আমি শ্রমের প্রহর
বিকাই আমার গুনের মোহর
বিকাই আমার মান
              বিকাই আমি –
বিকাই আমার প্রাণ ।।
কিনতে যদি চাও গো তারে
“বক্সী গঞ্জে পদ্মা পারে
হাট বসেছে শুক্রবারে ।।”
              বিকাই আমি –
বিকাই আমি – সবার তরে ।।

বিকাই আমি – আমার তরে
বিকাই আমি – তোমার তরে
বিকাই মানিক – বিকাই সে ধন
বিকাই দেহ – বিকাই সে মন ।।
বিকাই আমার বুদ্ধি সকল
                জলের দরে
                ওজন করে
                বিকাই আমি –
বিকাই আমি – সবার তরে ।।

একফোঁটা মান – নিজের তরে
রাখব আমি – যতন করে
ভেবেছিলেম – আপন মনে
একটুকু আশ একটু ক্ষণে ।।

চুকিয়ে দেখি ঋণের বোঝা
একটুখানি রইলো ফাঁকা –
মানটুকু মোর – দিতে হলো 
              ফাঁকির ঘরে
              সুদের ভারে
শতেক আমার ঋণের দোরে ।।

বিকিকিনি হলও শেষে – দিন ফুরালো সন্ধ্যা এসে
হাট বাজার – আর – বন্ধ মহল –
কুড়িয়ে নিলেম – পসার সকল ।।

“গাড়ি চালায় বংশী বদন
সঙ্গে যে যায় ভাগ্নে মদন ।।”
পয়সা ঝুড়ি কাঁখে নিয়ে –
নিরুদ্দেশে যাই হারিয়ে –
মনখারাপি বিকেল সে জন
পথ হারায়ে ফুরায় সে ধন,
শূন্য আমি শূন্য সকল,
শূন্য দিয়ে ভরব আগল,
শূন্য তারে বোঝাই করে –
ফিরি আমি শূন্য ঘরে ।।

আমরাও সব

নি:সঙ্গ কিছু রূপকথা-

একা পথ একা মাঠ –

একা একা জোনাকির নাচানাচি –

নি:সঙ্গ কিছু উপকথা । ।

পরিশ্রান্ত দিনের শেষে

বিবর্ণ তোমার মুখের মতো।


হলুদ বিকেলগুলো সব – মাখামাখি জ্যোৎস্নার মতো

অন্ধকার আদর করে টেনে নেয়

রাঙা মেঘ – কেঁদে কেঁদে চলে যায় – ।।


একঘর বন্দী স্বপ্নগুলো

              জ্বলে ওঠে – নিষ্কাম প্রদীপ সব

হাওয়া ভরা বুকে – মুহুর্মুহু শঙ্খধ্বনি

              জ্বলে ওঠে

              বেজে ওঠে ।।


                 অতিদূর

ছায়াপথের মতো মনখারাপ –

                উড়ে যায় – উড়ে যায় –

যেখানে আমার তাতাই নদী –

                আঁকা বাঁকা পথ ঘুরে

                 সীমাহীন দূর সুদূরের নেশা –

ভেসে যায় – ভেসে যায় –

তেমনই অধরা ক্ষীণ – তুমি ।।


তবু তো কিছু মেঠো পথ – আজও পথ খুঁজে পায়

তবু তো কিছু বালুচর – তীর খুঁজে পায় –

তবু তো কিছু নেশা নেশা – আচ্ছন্ন মদিরা

ঠোঁট খুঁজে পায় – মন খুঁজে পায় – ।।


এভাবে চলে যাবে বলে নি তো কেউ –

এভাবে হেরে যাবে ভাবে নি তো কেউ –


কত রাত কেটে গেছে – আকাশের তারা গুনে গুনে –

কত দিন কেটে গেছে – বসন্ত গুনে গুনে

               মনে মনে

               কেটে গেছে ।।


অচেনা তারাদের ভিড়ে ভিড়ে

                খুঁজে ফিরি – তবু সেই –

চেনা-মুখ যদি পাই – সেই আগের মতো –

যদি আবার কথকতা ভরা দুটি চোখ –

                 বলে ওঠে – আরবার

পিউ তাতা ফিরে গেছে আদরে আদরে

                এসো তবে

                আঁধারে গভীরে ।

                চলে যাই আমরাও সব –

Listen this poetry


 

Announcements

  • আপনাদের আশীর্বাদে আমাদের এই ক্ষুদ্র উদ্যোগ অষ্টম বর্ষ অতিক্রম করলো। আমরা আমাদের এই site টি নতুন ভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করলাম। আপনাদের মতামত জানান আমাদের email এ (info@amarbanglakobita.com)। বিশদ জানতে contact us menu দেখুন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
  • আনন্দ সংবাদ! আমাদের এই site এ এবার থেকে গল্প, অনু গল্প, প্রবন্ধ ও উপন্যাস প্রকাশিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আপনাদের সহযোগিতা একান্ত কাম্য।

Recent Comments

Editorial Choice