Month: January 2015

মোনালিসা (হাসান ইমতি)

মোনালিসা, তোমার করতলে আমার সকল স্বপ্ন-সাধ
অথচ তোমায় নিয়ে কবিতা লিখে যায় নিশুতি রাত,
মোনালিসা, যদি ফিরিয়ে দাও, ব্যর্থ হয়ে যাবে জীবন
তবুও তোমায় নিয়ে কবিতা লেখে বুড়ো নির্মলেন্দু গুণ ।

মোনালিসা, এই চোখে তুমিই সব সৌন্দর্যের উপমা
অথচ তোমাকে নীলের মায়ায় জড়ায় ঐ দূর নীলিমা,
তোমার নামে ভরা কবিতার খাতা থেকে বাজারের ফর্দ
তবুও তোমাকে আঁকে বজ্জাত দ্য ভিঞ্চি লিওনার্দো ।

মোনালিসা, ছিলে, আছো, থাকবে আমার সুখের স্বপন
অথচ তোমার নিজস্বতায় আমার জন্য নেই কোন স্থান,
মোনালিসা, তুমি আমার স্বপ্ন দেখার রঙিন আতস কাচ
তবুও তোমার নামে লক্ষ পৃষ্ঠা খোঁজে পাজি গুগল সার্চ ।

মোনালিসা, তোমাকে ঘিরেই আমার যত আকুলতা
অথচ তোমার হৃদয়ে আজ শুধুই তুষারের শীতলতা,
মোনালিসা, তোমাকে নিয়ে ধরেছি সর্বস্ব বাজী আজ
তবুও তোমাকে বাহুডোরে জড়ায় পরবাসী ফাইয়াজ ।

মোনালিসা, তোমার জন্য আমার সকল কান্না হাসি
তবুও প্রিয়তমা, বলতে পারিনা কতোটা ভালোবাসি,
মোনালিসা, ভালোবাসি বলে আমি ফিরে আসি বারবার
অথচ তোমার কবিতার পাতায় আজ আমি ছারখার।

মোনালিসা, তুমি ছাড়া আমার নিজস্ব ক্যানভাস বর্ণহীন
তবুও তোমায় চেয়ে চেয়ে দেখে ঐ বেহায়া সূর্যের দিন,
মোনালিসা, শুধু তোমার জন্য আমার সব কষ্ট জমা
তবুও তোমায় আজকে না হয় করেই দিলাম ক্ষমা ।

 


 

ব্যবধান (অমরনাথ বনিক)

দূর সেই সীমানা পেরিয়ে  তুমি
আমি  আছি সীমানার ধারে
মাঝে পদ-চিহ্নহীন আলোক পথ।
মধ্যরাত্রে ভারি শীতল বায়ুর কাছে
একা হয়ে পরেছি আজ
শূন্যতা সঙ্গই বলে আমায়
কিন্তু  আমি  সেই সম্পর্ক চাই না।
তোমার সাথে থাকা সেই স্নিগ্ধ-বায়ু বয়ে চলে এখন আমার দেশকাল জুরে
তুমি কি এখনো সেইরকম ই আছো?
তুমি যদি থাকতে এখনও কি —
আগের মতন রাতের বৈশিষ্ট্য  পূরণে সাহায্য  করতে?

জানি না!
জানো,দূরের সেই পলাশের গাঢ় রক্ত-লাল
আবছা  হয়ে গেছে আজ।
আজ আর ধরা দেয় না
নদীর বুকে রৌদ্রের শেষ আভার সাক্ষী হয়ে যে পারে আমি আর তুমি বসতাম
সেই পার,এখন তীব্র  অপেক্ষায় আছে
আমাদের দুজনের।
যে কবিতার বন্যা তুমি আমায় দান করেছিলে,সেই ভাবাবেগ কোথায় যেন আজ উবে গেছে।
যে চাঁদকে তুমি আমায় নতুন করে দেখতে  শিখিয়েছিলে,সেই মায়া আজ কোন অলিক মেঘে ঢাকা পড়ে গেছে।
এই ব্যবধানের কোন শুরু নেই,
নেই কোন শেষ।
তবু,আজও পুরনো সেই স্মৃতির ধুলো বালি দিয়ে,আরও বেশী জড়িয়ে নিয়েছি তোমাকে  ।
আজও ধরে রেখেছি সেই স্মৃতিগুলিকে
এই নিঃস্ব পাতায়।

লাল সূর্যের নিচে কিছু আলোহীন মানুষ (হাসান ইমতি)

রাগ অনুরাগের স্বপ্ন-মেদুর রঙে অকাতর হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া
শাশ্বত ভালোবাসা আজ বিলাপ-হীন জীবন যুদ্ধে অসহায়
পরাভূত হয়ে সস্তা নাগরিক বিনোদনের নির্লজ্জ কাঁচুলি পরে
কষ্টে মুখ লুকায় সিনেমা-স্কোপের বাণিজ্যিক মিথ্যাচারের আচলে ।

সময়ের চেয়ে দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় ক্লান্ত মানবিক বোধের প্রাচীন
ধূলিধূসর ধ্যান ধারনা আজ ক্ষতবিক্ষত হয়ে ক্রমশ বদলে যায় নব্য
সময়ের গতিশীল স্বার্থপর চাহিদার সীমাহীন স্পর্ধিত উস্কানিতে ।

উশর আধুনিকতার অন্তহীন রেসকোর্সর ঘোড়দৌড়ের
মাঠে খালি পায়ে পথ হেটে চলা সাদা ধবধবে অথর্ব বিবেক
বুড়োকে অবলীলায় কক্ষচ্যুত করে বিপুল গৌরবহীন
বিজয়ে সমাসীন হয় সমসাময়িক ঊর্ধ্বগতি বাজারদর ।

সামাজিক বন্ধন শিকলে আবদ্ধ মানুষের পারস্পরিক
সম্পর্কের স্থানাঙ্ক নির্ধারণে হৃদয়ের মানবিক স্থান অকস্মাৎ
জবরদখল করে নেয় হিসাব নিকাশের ডিজিটাল নিক্তি ।

সবকিছুর পরেও পুরনো লাল সূর্যটা একই থেকে যায়,
বরাবর আলোর বর্ণীল পসরা সাজিয়ে রাখে শর্তহীন ।

কেবল লাল সূর্যের নিচে কিছু মানুষ রয়ে যায় আলোহীন,
কেবল লাল সূর্যের আলোয় কিছু মানুষ বদলায় অনুতাপহীন,
সূর্যের বিপুল প্রেক্ষাপটে কিছু মানুষ কেবল নগণ্য হয়ে যায়,
অনন্ত সূর্যের নিচে কিছু অন্ধকার মানুষ কেবল সূর্যের উদার
আলোয় আলোকিত হয় না, আত্মার অতল গহীনে জমে থাকা
মৃত্যুর চেয়ে কালো আঁধার ঘোঁচে না সূর্যের অমেয় আলোয়।

 


 

সানুনয় নিবেদন (হাসান ইমতি)

ক্ষুধিত ইচ্ছেময় পুরুষ-গন্ধি রাতের বুক পকেটের
অনৈতিক ভাজে রাখা কাম-ভেজা কোন শরীরময়
বোধের সাথে আমার আর হয়না নির্ঘুম সহবাস …
স্পর্ধিত বিশ্বাসের উর্বশী পাখায় লোলুপ আগুন
জ্বেলে পুড়িয়ে ফেলেছি আমার সব সুখস্বপ্ন …
একটি ছিল কবিতা, একটি সাগর, অন্যটি তুমি,
এখন আমার আর লাল বেগুনী কোন চাওয়া নেই,
আমার আর নেই জ্যোৎস্না প্লাবিত মধ্যবিত্ত অসুখ ।

জীবনের কিছু আঁধার-ঘেরা রহস্য জানতে হয়না,
তবুও স্খলিত সময়ে অনন্ত আঁধারের মাঝে বিস্মৃত
আত্মপরিচয় খুঁজে নিতে নিতে আমি জেনে
যাই জীবনের কিছু অপ্রয়োজনীয় নির্মম সত্য,
জীবনের কিছু অনাবশ্যক বিভীষিকাময় রহস্য,
আজন্ম লালিত বিশ্বাসের শেষকৃত্য শেষে
এখন আমার হৃদয়ে কেবলই অনল দহন,
এখন আমার দুচোখে শুধুই অনিবার্য ধ্বংস,
এখন আমি শুধু বিনাশ চাই মিথ্যে প্রহেলিকার,
সানুনয় নিবেদন শুধু একটি মহা প্রলয় ও একটি নতুন শুভ সূচনার।

 


 

অলীক সুখ (হাসান ইমতি)

আতস কাচের চোখ থেকে আকাশের নীল
ঢেকে দেওয়া বৃষ্টির ঝুম পর্দা সরিয়ে যখন
তুমি নারীসুলভ পেলব ছলনা মেখে পুরনো
অতীতকে ফিরে পাবার অনাবৃত বাসনায়
বহুদিন পর আবার তাকালে আমার পরিত্যক্ত
পৃথিবীর মত বদলে যাওয়া পুরুষ চোখে তখন
আর আগের মত দক্ষিণ মেরুর সব সাদা বরফ
গলে মহাপ্লাবন এলো না নুহের পৃথিবীতে ।

কেবল একাকী রাত কান্নার মত হেসে লুটিয়ে
পড়ল শরীরসর্বস্ব নারীর ক্লান্তিকর অস্তিত্বে উষ্ণতা
খোঁজা বোকা মানুষটির সুখ ভাবনার উদারতায়,
তবু তুমি স্বার্থের হিসেবী শকুন চোখের মোহ হটালে
না আমার তোমার জন্য মৃত পাথর চোখ থেকে,
সব ভুলিয়ে দেয়া মায়াবী কন্ঠে পুরনো সেই মধু
ঢেলে আগের মত জানতে চাইলে “কেমন আছো ?”

তখন ভালো থাকা না থাকার মাঝের কুমারী
পর্দাটা ছিনাল নারীর মত বেফাঁস দুলে উঠে
বলল, প্রিয়তম, আবার দেখা হবে সহরমনে,
ডানা ঝাপটানো মৃত্যুর মত বেশরম কষ্টগুলোকে
ডালপালা সহ ভেসে যাওয়া শারীরিক রাতের
নিজস্ব গল্প শোনাতে শোনাতে ফিরে পাওয়া
গাঙ হরিণের ক্ষুধিত জীবন থেকে আমি ফিরিয়ে
দিলাম স্মৃতির দংশন জর্জরিত কিছু অলীক সুখ ।


 

Announcements

  • আপনাদের আশীর্বাদে আমাদের এই ক্ষুদ্র উদ্যোগ অষ্টম বর্ষ অতিক্রম করলো। আমরা আমাদের এই site টি নতুন ভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করলাম। আপনাদের মতামত জানান আমাদের email এ (info@amarbanglakobita.com)। বিশদ জানতে contact us menu দেখুন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
  • আনন্দ সংবাদ! আমাদের এই site এ এবার থেকে গল্প, অনু গল্প, প্রবন্ধ ও উপন্যাস প্রকাশিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আপনাদের সহযোগিতা একান্ত কাম্য।

Recent Comments

Editorial Choice